[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৩ পৌষ ১৪৩২

এ বছরও কি নামাজ সব কাজার খাতায়?

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:১৫ পিএম

আরেকটি বছর শেষ হতে চলেছে। আমরা অনেকেই এই সময়ে

নিজেদের জীবন নিয়ে হিসাব করি—কতটা এগোলাম, কোথায় পিছিয়ে পড়লাম। কিন্তু খুব কম মানুষই সাহস করে নিজেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করে: এই বছরে আমি কি সময়মতো নামাজ আদায় করেছি?
নামাজ কোনো অতিরিক্ত নফল আমল নয়, কিংবা ইচ্ছা হলে করব—এমন কিছু নয়। এটি ইসলামের মূল ভিত্তিগুলোর একটি। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, বিচার দিবসে মানুষের যে আমলের হিসাব আগে নেওয়া হবে, তা হলো নামাজ। নামাজ ঠিক থাকলে অন্য আমলগুলোর দিকেও আল্লাহর রহমত নেমে আসে, আর নামাজ অবহেলায় নষ্ট হলে বাকি আমলও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো—আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নামাজই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। ফজরের সময় ঘুমের অজুহাত, যোহরে কাজের ব্যস্ততা, আসরে যানজট, মাগরিবে বাজার বা আড্ডা, আর এশায় ক্লান্ত শরীর—এই অজুহাতগুলো প্রতিদিনই আমাদের নামাজ পিছিয়ে দেয়। এভাবে সময়মতো আদায় না হওয়া নামাজ একে একে “কাজা”র তালিকায় জমতে থাকে।
অনেকে মনে করেন, পরে কাজা আদায় করলেই দায়িত্ব শেষ। কিন্তু নামাজের প্রকৃত সৌন্দর্য ও গুরুত্ব হলো নির্ধারিত সময়ে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া। কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা মুমিনদের জন্য ফরজ। অথচ আমাদের জীবনে প্রায় উল্টো চিত্র দেখা যায়—সময়মতো নামাজ ব্যতিক্রম, আর কাজা যেন নিয়ম।
নামাজ শুধু কিছু নির্দিষ্ট রাকাত আদায় নয়; এটি মানুষের জীবনকে শৃঙ্খলিত করে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং অন্যায় থেকে দূরে রাখে। যারা নিয়মিত নামাজে অভ্যস্ত, তাদের চরিত্রে ধীরে ধীরে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানরা নামাজকে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন হিসেবে দেখতেন।
তাহলে করণীয় কী?
প্রথমত, মানসিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে—নামাজকে জীবনের কেন্দ্রে রাখতে হবে। কাজ, পড়াশোনা, ব্যবসা—সবকিছু নামাজের সময় অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে, নামাজকে ফাঁকে ফেলা নয়।
দ্বিতীয়ত, ছোট অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যেমন—সম্ভব হলে সবসময় অজুতে থাকার চেষ্টা করা, আজান শোনা মাত্র প্রস্তুতি নেওয়া, ফোন বা অন্য ব্যস্ততাকে কয়েক মিনিটের জন্য পাশে সরিয়ে রাখা।
নতুন বছর আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন হলো—এই বছর কি আগের মতোই কেবল তারিখ বদলাবে, নাকি আমাদের ভেতরেও পরিবর্তন আসবে? নামাজ কি এবারও কাজার খাতায় জমা হবে, নাকি আমরা সময়মতো আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব?
এই সিদ্ধান্ত আজই নিতে হবে। কারণ নামাজের হিসাব শুধু বছরের শেষে নয়—একদিন পুরো জীবনের হিসাবের অংশ হয়ে যাবে। সেই দিনের আফসোস এড়াতে হলে, প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখন থেকেই।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর