[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৩ পৌষ ১৪৩২

বিশ্বকাপ ফাইনালের হতাশায় ক্রিকেট ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন রোহিত শর্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ৮:৩৭ পিএম

সংগৃহীত ছবি

বিশ্বকাপ ফাইনালের রাত শেষ হয়ে যায় এক সন্ধ্যায়, কিন্তু তার ক্ষত অনেক সময় বয়ে বেড়াতে হয় মাসের পর মাস।

গ্যালারির উল্লাস থেমে গেলে, ট্রফি যখন প্রতিপক্ষের হাতে উঠে—তখন সেই নীরবতার মধ্যেই ভেঙে পড়েন অনেক অধিনায়ক। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর ঠিক এমনই এক গভীর মানসিক সংকটের ভেতর দিয়ে গেছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি ক্রিকেট ছাড়ার কথাও ভেবেছিলেন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নিজের সেই অভিজ্ঞতার কথা অকপটে জানান রোহিত। তিনি বলেন, বিশ্বকাপ ফাইনালের হতাশা তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে এতটাই নিঃশেষ করে দিয়েছিল যে অবসর নেওয়ার চিন্তাও মাথায় এসেছিল।
রোহিত শর্মা বলেন, “আমরা সবাই ভীষণ হতাশ ছিলাম। ঠিক কী ঘটে গেল, সেটা তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার জন্য বিষয়টা ছিল আরও কঠিন, কারণ ২০২২ সালে অধিনায়ক হওয়ার পর থেকেই পুরো মনোযোগ ছিল বিশ্বকাপকে ঘিরে।”
তার কথায় স্পষ্ট, এটি কেবল একটি ম্যাচ বা একটি টুর্নামেন্ট হারার বেদনা নয়; বরং দুই বছরের পরিকল্পনা, দায়িত্ব এবং প্রত্যাশা একসঙ্গে ভেঙে পড়ার যন্ত্রণা।
ভারতীয় অধিনায়ক জানান, অধিনায়কত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপ জয়—তা টি–টোয়েন্টি হোক কিংবা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। “যখন সেই লক্ষ্য পূরণ হলো না, আমি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। শরীরে কোনো শক্তি ছিল না। নিজেকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কয়েক মাস সময় লেগেছে,” বলেন তিনি।
এই সময়টাকে রোহিত বর্ণনা করেছেন এক ধরনের মানসিক ‘শাটডাউন’ হিসেবে—যেখানে আগ্রহ, লক্ষ্য এমনকি খেলাটির প্রতিও টান ধীরে ধীরে নিভে যায়। তাঁর স্বীকারোক্তি ক্রিকেটারদের মানসিক চাপের একটি বিরল ও মানবিক চিত্র তুলে ধরে।
সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা বক্তব্য আসে তখনই, যখন তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে সত্যিই মনে হয়েছিল, আমি আর ক্রিকেট খেলতে চাই না। এই খেলাটা আমার কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে নিয়েছে, আর আমার দেওয়ার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নেই।”
তবে সময়, আত্মসমালোচনা এবং ধীরে ধীরে ফিরে আসার মানসিক প্রস্তুতিই তাঁকে আবার মাঠে ফেরায়। রোহিত জানান, নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হয়েছে—এই খেলাটাই তাঁর ভালোবাসা, এবং এত সহজে তা ছেড়ে দেওয়া যায় না।
“শক্তি জোগাড় করা, অনুশীলনে ফেরা, আবার মাঠে নামার ইচ্ছা তৈরি করা—সবকিছু একদিনে হয়নি। কিন্তু আমি জানতাম, সামনে আরও কিছু অপেক্ষা করছে,” বলেন তিনি।
সেই ‘আরও কিছু’-র ইঙ্গিত ছিল ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত সেই আসরই তাঁকে নতুন করে লক্ষ্য স্থির করতে এবং মানসিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করে।
রোহিত শর্মার এই স্বীকারোক্তি কেবল ক্রিকেট বিশ্লেষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি উচ্চতার শীর্ষে থাকা একজন অধিনায়কের মানবিক দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং সেখান থেকে ফিরে আসার গল্প—যা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার হয়ে থাকবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর