জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সমমনা ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা দু-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
তবে শরিক দলগুলোর জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠিক কতটি আসনে ছাড় দেবে, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
বর্তমানে জামায়াতের সঙ্গে থাকা আটটি ইসলামি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আরও দুই থেকে তিনটি দল যুক্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। নতুন করে যুক্ত হতে আগ্রহী দলগুলোরও বেশ কিছু আসনের দাবি রয়েছে। সব মিলিয়ে জামায়াতের শরিক দলগুলোর দাবি দাঁড়িয়েছে ৩৪৮টি আসন, যা জাতীয় সংসদের মোট আসনসংখ্যা ৩০০-এরও বেশি বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শাহাদতের ঘটনা, জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের লন্ডন সফর এবং লিয়াজোঁ কমিটির শীর্ষ নেতা ড. এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদের ওমরাহ পালনের কারণে আসন সমঝোতার বৈঠকগুলো সময়মতো করা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তারা।
প্রায় এক বছর আগে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরও সাতটি ইসলামি দল জামায়াতের সঙ্গে এক মঞ্চে আসে। দলগুলো আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে একমত হলেও আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে মাঠ জরিপকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি দল নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা যাচাই করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
মাঠ জরিপের ভিত্তিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১২০টি আসন দাবি করেছে। অপর ছয় শরিক দল—খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)—মিলে আরও ১০০টি আসনের দাবি তোলে। সব মিলিয়ে সাত শরিক দলের দাবি দাঁড়ায় ২২০টি আসন। তবে এ দাবির বিষয়ে জামায়াত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আগের সাত দলের পাশাপাশি নতুন করে আরও কয়েকটি দল যুক্ত হতে চাওয়ায় মোট আসন দাবি ৩৪৮-এ পৌঁছেছে। তিনি জানান, এসব দাবি প্রত্যাশার জায়গা থেকে এসেছে এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে দলের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রচার-মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, কে কত আসন চেয়েছে তা মুখ্য নয়; মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিজয়ের সম্ভাবনা বিবেচনায় আট দলকে সফলভাবে নির্বাচনে এগিয়ে নেওয়া।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক বিলম্বিত হয়েছে। তবে দু-একদিনের মধ্যেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শরিক দলগুলোর অতিরিক্ত দাবিকে জামায়াত বাস্তবতার নিরিখে দেখছে। সবাইকে একসঙ্গে রাখতে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলেও সেই ছাড় কতটি আসন পর্যন্ত হতে পারে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
জামায়াতের এক নেতা বলেন, সংখ্যার হিসাব নয়—জয়ের সম্ভাবনাই আসন সমঝোতার প্রধান মানদণ্ড হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আট দলের শীর্ষ নেতাদের বিজয় নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এসআর
মন্তব্য করুন: