[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৪ পৌষ ১৪৩২

সবদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে বিএনপি, ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতিতে দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১:২০ পিএম

সংগৃহীত ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও খুনিদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ মনে করছেন, এটি নিছক একটি অপরাধ নয়; বরং এর পেছনে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এই ঘটনার পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি বর্তমানে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দলটি ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সংযত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো উসকানি বা পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করতে না পারে। বিশেষ করে ২৫ ডিসেম্বরের রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করা এবং নির্বাচনমুখী পরিবেশ বজায় রাখতে বিএনপি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নেতারা বলেন, শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যা এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাদের মতে, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা জাতীয় নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।
বৈঠকে বিএনপি অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি তোলে। একই সঙ্গে নৈরাজ্যবিরোধী সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড দেশের রাজনীতিতে একটি সম্ভাব্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’। একদিকে জনমনে আতঙ্ক, অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা—এই দ্বিমুখী সংকটের মধ্যে বিএনপি সতর্ক প্রহরীর ভূমিকায় রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী দেশকে জিম্মি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আমাদের সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণার পরপরই এই হত্যাকাণ্ডসহ ধারাবাহিক কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটি একটি পরিকল্পিত ছকের ইঙ্গিত দেয়।”
তিনি বলেন, “যত ষড়যন্ত্রই হোক, আমরা গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবই। এই দেশে নির্বাচন হবে এবং হতে হবে। নির্বাচন বানচালের যেকোনো চেষ্টা আমরা প্রতিহত করব এবং জনগণের রায়ের মাধ্যমেই তার জবাব দেওয়া হবে।”
দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হলেও অত্যন্ত ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। দলটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার কোনো চেষ্টা তারা মেনে নেবে না। পাশাপাশি ২৫ ডিসেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্ন করতে তারা বদ্ধপরিকর।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এবং নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি অপশক্তি এতে জড়িত থাকতে পারে। তবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করা যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের সমাবেশের মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে—কোনো ষড়যন্ত্রই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না।”

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর