বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা–কক্সবাজারসহ দেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়েছে।
শনিবার থেকে নতুন এই ভাড়া কার্যকর হয়েছে।
এবার সরাসরি টিকিটের মূল্য না বাড়িয়ে ‘পন্টেজ চার্জ’ বা অতিরিক্ত মাশুল আরোপের মাধ্যমে ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে।
এর ফলে আসন ও রুটভেদে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা–চট্টগ্রাম, ঢাকা–কক্সবাজার, ঢাকা–সিলেট, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর এবং ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ—এই ছয় রুটের মোট ১১টি সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়েছে।
রেলওয়ের ভাষায়, রেলপথে কোনো সেতু বা সমজাতীয় স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে যে অতিরিক্ত মাশুল নেওয়া হয়, সেটিই পন্টেজ চার্জ।
নিয়ম অনুযায়ী ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুকে আড়াই কিলোমিটার পথ হিসেবে গণনা করা হয়।
ফলে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর ক্ষেত্রে দূরত্ব ধরা হয় ২৫ কিলোমিটার। এতে কাগজে-কলমে রুটের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায় এবং সেই অনুযায়ী ভাড়াও বৃদ্ধি পায়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আয় বাড়ানো ও ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে গত ২৫ মে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের উপস্থিতিতে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে টিকিটের ভাড়া না বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ১৩টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর মধ্যে অন্যতম ছিল ১০০ মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুগুলোতে পন্টেজ চার্জ আরোপ।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সব রুটে নয়, কেবল নির্দিষ্ট কিছু রুটে এই অতিরিক্ত ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরোনো সেতুগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ২০১২ সালে ছিল ৫৮৫ টাকা, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৫ টাকায়। ২০২৪ সালে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের পর ভাড়া হয় ৮৫৫ টাকা। নতুন পন্টেজ চার্জ যুক্ত হওয়ার পর বর্তমানে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ৯৪৩ টাকা।
ঢাকা–কক্সবাজার রুটে চলাচলরত কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া এক হাজার ৩২২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪৪৯ টাকা।
একই রুটে এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৪৩০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৫৬ টাকায়। এই রুটেই সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালে এক দফায় ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। ২০১৬ সালে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধি পায় ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০২২ সালে নন-এসি প্রথম শ্রেণির টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়।
২০২৪ সালে অতিরিক্ত বগির টিকিটে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়। একই বছরের মে মাসে দীর্ঘপথে যাত্রীদের রেয়াতি সুবিধাও প্রত্যাহার করা হয়।
ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ভোক্তা সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, রেল স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যম।
বারবার কৌশলে ভাড়া বাড়ানো সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
সরকার চাইলে রেলের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করেই রাজস্ব বাড়াতে পারে।
এসআর
মন্তব্য করুন: