[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৪ পৌষ ১৪৩২

বাবাকে শেষবার কী বলেছিলেন রুমী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ৬:৩১ পিএম

সংগৃহীত ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাত আরা রুমী (৩২) মৃত্যুর আগে বাবার সঙ্গে শেষ ফোনালাপে কিছু বিষয় নিয়ে মানসিক চাপে থাকার কথা জানিয়েছিলেন।

পাশাপাশি পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে বাড়ি ফেরার কথাও বলেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মাধ্যমে মেয়ের মৃত্যুর খবর পান রুমীর বাবা জাকির হোসেন। খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় মেয়ের মরদেহ নিতে রওনা হন।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর জিগাতলা পুরাতন কাঁচাবাজার সড়কে অবস্থিত জান্নাতী ছাত্রী হোস্টেলের পঞ্চম তলা থেকে রুমীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

হাজারীবাগ থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

গণমাধ্যমকে জাকির হোসেন জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর মেয়ের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। সে সময় রুমী তাকে জানান, তিনি ‘টেনশনে’ রয়েছেন। তবে কী নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন, তা স্পষ্ট করে বলেননি।

তিনি আরও জানান, পাসপোর্ট করানোর জন্য রুমীর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। পাশাপাশি বাসায় রাখা একটি ব্যাংক চেক খুঁজে রাখতে বাবাকে অনুরোধ করেছিলেন রুমি।

জানা গেছে, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন ধানমন্ডিতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে মারধরের ঘটনায় রুমীর নাম আলোচনায় আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে ওই নারীকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এই ঘটনার পর থেকেই জান্নাত আরা রুমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত হুমকি, ধমকি ও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা।

ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “গত এক মাস ধরে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ক্রমাগত সাইবার বুলিং, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকিতে রুমী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর সহায়তা পাওয়া যায়নি।”

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, রুমী ধানমন্ডি শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন। তিনি বলেন, “প্রায় দুই মাস ধরে রুমী ভয়াবহ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন। হত্যা ও ধর্ষণের হুমকিও পাচ্ছিলেন। এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড ছিলেন।”

তিনি আরও জানান, রুমীর বর্তমান ঠিকানা, পারিবারিক ও গ্রামের পরিচয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা তার মানসিক অবস্থাকে আরও নাজুক করে তোলে।

মৃত্যুর আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাসে রুমী ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির নাম উল্লেখ করে লেখেন,
“ইয়া আল্লাহ, হাদি ভাইকে আমাদের খুব দরকার।”

এর একদিন আগে দেওয়া আরেকটি পোস্টে একটি ছবি যুক্ত করে তিনি লেখেন,
“একদিন ভোর হবে, সবাই ডাকাডাকি করবে, কিন্তু আমি উঠব না—কারণ আমি ভোরে উঠি না।”

ঘটনার পর রুমীর মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর শোক ও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর