আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আলোচনা থাকলেও আপাতত উপদেষ্টা পরিষদে কোনো রদবদল হচ্ছে না।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেই থাকছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের দায়িত্বেও কোনো পরিবর্তন আসছে না।
সরকারের তিন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার একাধিক বিশেষ সহকারী সমকালকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার থেকে গুঞ্জন ছিল—জাহাঙ্গীর আলমকে সরিয়ে খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কয়েকটি গণমাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদলের খবরও প্রকাশিত হয়। তবে এসব গুঞ্জন নাকচ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে তাঁর জানা মতে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যাওয়ার আগে তিনি এ কথা জানান। এর আগে শেরেবাংলা নগরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে উপদেষ্টাদের নিয়ে সরকারপ্রধান একটি অনানুষ্ঠানিক সভা করেন। সেখানে আসন্ন নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও উপদেষ্টা পরিষদের রদবদল নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন।
রদবদলে রাজি নয় রাজনৈতিক দলগুলো
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও বিশেষ সহকারী জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্ব ক্ষোভ প্রকাশ করছে। গোয়েন্দা ব্যর্থতার সুযোগে হত্যাকারীরা ভারতে পালিয়ে গেছে—এমন ধারণা থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি উঠেছে। হাদির মৃত্যুর পর বিভিন্ন সংবাদপত্রের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এসব বিবেচনায় জাহাঙ্গীর আলমকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরানোর আলোচনা হলেও তা সিদ্ধান্তের পর্যায়ে যায়নি।
এক উপদেষ্টা জানান, খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি রয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এ বিষয়ে স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে। ফলে তাঁকে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সরকার এগোয়নি।
জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে বলেন, খলিলুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলে পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীগুলোর সহযোগিতা পাওয়া যাবে না—এমন আপত্তি রয়েছে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে এবং নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান উপদেষ্টাদের মধ্য থেকেই কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন করেছিল। যদিও পরবর্তীতে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর সম্পর্কের উন্নতি হয় বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তবুও বিভিন্ন বাহিনীর আপত্তির কারণে বিএনপিও তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেখতে চায় না।
আইজিপি বদল হচ্ছে না
একাধিক উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারী জানান, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এখনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশের পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন হয়নি এবং বাহিনীর মনোবল দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা আইজিপি বাহারুল আলম এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে সরানোর আলোচনা হলেও জনপ্রশাসন বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। তাদের মতে, নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। পাশাপাশি ছাত্রনেতৃত্বের দাবির মুখে পুলিশে পরিবর্তন হলে নির্বাচন ঘিরে প্রশাসন পুনর্গঠনের চাপ বাড়তে পারে।
ফলে আপাতত আইজিপি ও পুলিশ প্রশাসনে কোনো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
এসআর
মন্তব্য করুন: