[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৩ পৌষ ১৪৩২

দোহায় জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলন

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাংবাদিক ও হুইসেলব্লোয়ারদের নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান

এম. এ. রনী

প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১:২৮ পিএম

এম. এ রনী, দোহা, কাতার: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু ব্যক্তিগত সাহসের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না—এ জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী আইন, প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা এবং আধুনিক প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার। দোহায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলনের (Conference of the States Parties – COSP11) চতুর্থ দিনে এমনই বার্তা উঠে আসে আলোচনায়।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা। সম্মেলনে বলা হয়, দুর্নীতি উন্মোচনে হুইসেলব্লোয়ার ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তাঁদের অনেক সময় প্রতিশোধ, হয়রানি, পেশাগত ঝুঁকি এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়তে হয়। কার্যকর সুরক্ষা কাঠামো ও নিরাপদ অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা না থাকলে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

প্রযুক্তি ও AI-তে সুরক্ষার সম্ভাবনা: আলোচনায় প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-ভিত্তিক নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এসব প্ল্যাটফর্ম তথ্যদাতাদের পরিচয় গোপন রেখে নিরাপদভাবে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে সহায়তা করতে পারে, যা ভবিষ্যতে দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মত দেন বক্তারা।

২৩ দেশে হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষায় সহায়তা দিয়েছে UNODC: জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর (UNODC) জানায়, ২০২৪–২০২৫ সময়কালে ২৩টি দেশে হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছে সংস্থাটি। সরকার, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে একটি স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য দুর্নীতিবিরোধী পরিবেশ গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। UNODC মনে করে, মানুষকে নিরাপদে কথা বলার সুযোগ না দিলে দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র সামনে আসে না এবং জনস্বার্থ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

স্বল্পোন্নত দেশ ও উপকারভোগী মালিকানা নিয়ে আলোচনা: সম্মেলনের আজকের আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (LDCs) অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি উপকারভোগী মালিকানা (Beneficial Ownership) সংক্রান্ত স্বচ্ছতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিকানা গোপন থাকলে দুর্নীতির অর্থ পাচার সহজ হয় বলে আলোচনায় উল্লেখ করা হয়। আফ্রিকার আঞ্চলিক কাঠামোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে স্বচ্ছতা বাড়ানোর উদ্যোগ তুলে ধরা হয়।

আয়োজনের ৪র্থ দিনের উক্তি: 

UNODC-এর ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস অফিসার কারিন অ্যান লুকাস বলেন—

“উপকারভোগী মালিকানার স্বচ্ছতা মানুষ, স্থান এবং আইনি সত্তার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। এর মাধ্যমে কার মালিকানায় কী রয়েছে তা বোঝা সহজ হয় এবং চুরি হওয়া সম্পদ শনাক্ত ও উদ্ধারে সহায়তা মেলে।”

 

একই দিনে আরবি ভাষা দিবস উদযাপন: সম্মেলনের ভেন্যুতে বিশেষ আয়োজনে পালিত হয় আরবি ভাষা দিবস। এতে ভাষা ও পরিচয়ের গুরুত্ব, পারস্পরিক সংলাপ এবং সুশাসনে ভাষার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। আয়োজকরা বলেন, কার্যকর শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী দিনে সম্মেলনে জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের (UNCAC) অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা ব্যবস্থা, দুর্নীতির শিকারদের অধিকার এবং ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক পর্যালোচনা কাঠামো নিয়ে একাধিক উচ্চপর্যায়ের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর