ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাদরামাউত প্রদেশে সৌদি আরব বিমান হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো এ অভিযোগ করেছে। শুক্রবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দিন আগে সৌদি আরব ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাম্প্রতিক দখল করা এলাকা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। এর পরদিনই দক্ষিণ ইয়েমেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। উল্লেখ্য, ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রধান মিত্র দেশ হলো সৌদি আরব।
এই হামলায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে দীর্ঘদিন তুলনামূলক শান্ত থাকা ইয়েমেনে নতুন করে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে চলমান ইয়েমেন সংকটে সৌদি আরব, ইরানসহ একাধিক আঞ্চলিক শক্তি জড়িয়ে রয়েছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রার ফলে ইয়েমেন সরকারের ভেতরে থাকা বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেওয়া সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। ইয়েমেনের বর্তমান সরকার নানা গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিও রয়েছে। ইরান-সমর্থিত হুথিদের বিরোধিতা এই জোট সরকারকে একত্রে রেখেছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম অ্যাডেন ইন্ডিপেনডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেছে, হাদরামাউতের ওয়াদি নাহব এলাকায় হাদরামি এলিট ফোর্সেসের অবস্থানে সৌদি বিমান বাহিনী হামলা চালিয়েছে। এই বাহিনীটি বিচ্ছিন্নতাবাদী শিবিরের একটি অংশ।
আমিরাত-সমর্থিত সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) জানিয়েছে, ওই এলাকায় সৌদি আরব দুটি পৃথক বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে ইয়েমেন সরকারকে সমর্থন দেওয়া সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এর আগে ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সৌদি ঘনিষ্ঠ এক উপজাতীয় নেতার সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর ওই নেতা এলাকা ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন হাদরামাউতের এক সামরিক কর্মকর্তা।
এর এক দিন আগে সৌদি আরব হাদরামাউত ও মাহরা প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। চলতি মাসের শুরুতে এই দুটি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা।
এদিকে ইয়েমেনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদারের সৌদি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সাম্প্রতিক সংঘাতে ভিন্ন পক্ষকে সমর্থন করলেও উপসাগরীয় এই দুই দেশ একযোগে উত্তেজনা কমানোর বার্তা দিতে চাইছে।
রিয়াদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি মাসের শুরুতে সৌদি-আমিরাতি একটি সামরিক প্রতিনিধিদল অ্যাডেন সফর করে এসটিসিকে দখল করা এলাকা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। তবে এসটিসির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অগ্রগতি ইয়েমেনে আরও বড় ধরনের উত্তেজনা ও বিভক্তির ঝুঁকি তৈরি করছে। তিনি সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানান।
২০১৪ সালে হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখলের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই ইয়েমেন কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৫ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুথিদের সঙ্গে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটসমর্থিত সরকারের সংঘাত চলছে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং দেশটি ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। যদিও ২০২২ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পর সংঘর্ষের মাত্রা কিছুটা কমে আসে।
এসআর
মন্তব্য করুন: