[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৩ পৌষ ১৪৩২

আদানির বিদ্যুৎ কিনে লোকসান ১৪ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৫৫ এএম

সংগৃহীত ছবি

ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির কারণে বড় আর্থিক চাপে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

অন্যান্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র ও ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় গত দুই বছরে শুধু এই এক চুক্তিতেই পিডিবির লোকসান হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরেই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার কোটি টাকা।

পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, “আদানির বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সরকারকে অবহিত করা হয়েছে।

২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তির শর্ত অনুসারে বিদ্যুৎ না নিলেও পিডিবিকে প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জসহ বিভিন্ন চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ ও কয়লা—উভয় ক্ষেত্রেই আদানির কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি দামে কিনছে বাংলাদেশ। ফলে গত তিন অর্থবছরে বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ পিডিবির মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে আদানির বিদ্যুৎ থেকেই লোকসান প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, চুক্তি অনুসারে কোনো বিদ্যুৎ না নিলেও প্রতি মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৪৫০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হয়। গত দুই অর্থবছরেই আদানিকে বিদ্যুৎ আমদানির বিপরীতে বিল দেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আদানিকে দেওয়া বিলের পরিমাণ কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

পিডিবির তথ্যে দেখা যায়, নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন খরচ যেখানে প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ২৬ পয়সা, সেখানে আদানির বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা ৮৬ পয়সা। ভারতের অন্যান্য কোম্পানি ও নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় খরচ ৮ টাকা ৭১ পয়সা, যা আদানির তুলনায় অনেক কম।

কয়লার দামেও বাড়তি ব্যয় বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে অন্যান্য কেন্দ্র যেখানে প্রতি টন কয়লা কিনেছে ৭১–৭৬ ডলারে, সেখানে আদানির কয়লার গড় দাম ছিল ৭৬ দশমিক ৯১ ডলার।
আদানি অস্ট্রেলিয়ায় নিজস্ব কয়লাখনি থেকে গড্ডা কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করছে।

কয়লার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বিরোধ তৈরি হওয়ায় বিষয়টি বর্তমানে সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন।
এ বিষয়ে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, “এ ধরনের চুক্তি দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আলোচনার মাধ্যমে কম দামে বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর