[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৪ পৌষ ১৪৩২

চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে ডায়রিয়া, ১০ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১০৭০ রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:০৭ পিএম

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ডায়রিয়ার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে

বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গত ১০ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে এক হাজার ৭০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন।

চিকিৎসকদের মতে, শীতের শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবে না মানাই ডায়রিয়া বাড়ার প্রধান কারণ। তারা জানান, আতঙ্কের কিছু না থাকলেও অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া জরুরি।

রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডগুলোতে তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগী, বিশেষ করে শিশুরা, ঠান্ডা মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শীতের মধ্যে শিশুদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন অভিভাবকেরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ডায়রিয়া ওয়ার্ডেই ভর্তি হয়েছেন ১,০৭০ জন রোগী। এর মধ্যে ১৪ ডিসেম্বর একদিনেই ভর্তি হন ১০৯ জন।

ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। সীমিত জনবল নিয়ে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর মা শাহিনা খাতুন জানান, তার দুই বছর বয়সী সন্তানের হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে আনেন। কিন্তু শয্যা না পেয়ে ঠান্ডা মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে।

আরেক অভিভাবক মর্জিনা খাতুন বলেন, রাতে শীতের মধ্যে মেঝেতে শিশু নিয়ে থাকা খুব কষ্টকর। তবে রোগীর চাপ বেশি হলেও চিকিৎসাসেবা যথাসম্ভব পাওয়া যাচ্ছে।

দায়িত্বরত এক সিনিয়র স্টাফ নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শীত মৌসুম শুরু হলেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। জনবল সংকট থাকলেও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার রোগী অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে অনেক শিশু নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি জানান, ডায়রিয়া নিজে খুব ভয়ংকর না হলেও সময়মতো চিকিৎসা না পেলে পানিশূন্যতা প্রাণঘাতী হতে পারে। রোটা ভাইরাসে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না এবং এর নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও নেই। তাই চিকিৎসার প্রধান উপায় হলো ওরাল স্যালাইন।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের নরম খাবার, কাঁচা কলা ভর্তা ও ডালের পানি দিতে হবে এবং প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়ানো বাধ্যতামূলক।

এখনই সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর