[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৪ পৌষ ১৪৩২

এবারও বছরের শুরুতে সব বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ৩:১৬ এএম

সংগৃহীত ছবি

আর মাত্র কয়েক দিন পরই শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষ।

নতুন বইয়ের ঘ্রাণে পাঠদান শুরুর অপেক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় তিন কোটি শিক্ষার্থী।

তবে গতবছরের মতো এবারও বছরের শুরুতেই মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী হাতে পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তক।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এখনো মাধ্যমিক স্তরের ৪০ শতাংশের বেশি বই ছাপাতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বই ছাপানোর সক্ষমতা নেই—এমন একাধিক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

এ ছাড়া এনসিটিবির কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং পুনরায় দরপত্র আহ্বান করায় ছাপার কাজ আরও বিলম্বিত হয়েছে।

এ বছর স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য প্রয়োজন ২১ কোটির বেশি বই। তবে এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে আট কোটি বই সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হয়নি।

ফলে বছরের শুরুতেই অনেক শিক্ষার্থী সব বই হাতে পাচ্ছে না, যা তাদের পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন স্বীকার করেছেন, মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীকে একযোগে বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, “মাধ্যমিকের তিনটি শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব বই সরবরাহের চেষ্টা চলছে।”
উল্লেখ্য, দরপত্রে অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের অভিযোগে গত ১৯ আগস্ট সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার দরপত্র অনুমোদন দেয়নি।

ফলে এই তিন শ্রেণির বই ছাপার কাজ সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়।
তদন্তে জানা গেছে, কয়েকটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান প্রকৃত সক্ষমতা না থাকলেও বড় অঙ্কের কাজ পায়।

যেমন—ঢাকার মাতুয়াইলের একটি প্রতিষ্ঠান নবম শ্রেণির বিপুলসংখ্যক বই ছাপার দায়িত্ব পেলেও প্রয়োজনীয় মেশিন ও জনবল না থাকায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি।

আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে তাদের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি, ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার একাধিক ছোট মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান কাটিং ও বাইন্ডিং সুবিধা ছাড়াই বই ছাপার কাজ পায়। নিয়ম অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়ার কথা না থাকলেও ‘ম্যানেজ’ করে দায়িত্ব নেওয়ায় সময়মতো বই সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, বইয়ের মান যাচাইয়ের জন্য গঠিত ইন্সপেকশন টিম নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট কাগজকল থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দেননি।

আগামী শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বই ছাপানোর লক্ষ্য রয়েছে।

এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির চার কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির চার কোটি ১৫ লাখ এবং অষ্টম শ্রেণির চার কোটি দুই লাখের বেশি বই সময়মতো প্রস্তুত হয়নি।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, “মাধ্যমিক স্তরের প্রায় অর্ধেক বই এখনো প্রস্তুত হয়নি। সক্ষমতা নেই—এমন অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

বই উৎপাদন ও বিতরণের প্রধান দায়িত্ব যাদের, তাদের অজান্তে এসব অনিয়ম হওয়ার কথা নয়।
এদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষ ২০২৬ উপলক্ষে আজ (রোববার) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ উন্মুক্ত করা হবে।

এনসিটিবির ওয়েবসাইটে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের মোট ৬৪৭টি পাঠ্যবই একযোগে প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।



এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর