প্রকাশিত:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২:০৭ এএম
পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম সচিব মাকসুদা হোসেনকে সরকারি গাড়িতে জিম্মি করে ছয় লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে তাঁরই গাড়িচালকের বিরুদ্ধে।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা ওই কর্মকর্তাকে গাড়িতে আটকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরানো হয়।
একপর্যায়ে দুপুরের দিকে গাড়িটি পরিকল্পনা কমিশনে পৌঁছালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চালককে আটক করেন।
জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া মাকসুদা হোসেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে কর্মরত। অভিযুক্ত চালকের নাম আবদুল আউয়াল। তিনি গত দুই মাস ধরে ওই যুগ্ম সচিবের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার বাড়ি বগুড়ায়। এর আগে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের আরেক যুগ্ম সচিবের গাড়িচালক ছিলেন।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, অপহরণের অভিযোগে বিকেলে অভিযুক্ত গাড়িচালককে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনার বিবরণে মাকসুদা হোসেন জানান, সকাল ৮টার দিকে ধানমন্ডির বাসা থেকে তিনি পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে ওঠেন। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে এসে চালক গাড়ি কমিশনের দিকে না নিয়ে বিজয় সরণির দিকে চালাতে থাকেন। গাড়ি অন্যদিকে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি চালক।
তিনি জানান, মহাখালী ও বনানী হয়ে চালক গাড়ি বিমানবন্দর সড়কের দিকে নিয়ে যান। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে তিনি এক সহকর্মীকে বিষয়টি জানান। এ সময় তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিতে চাইলে চালক জোর করে তার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেন এবং গাড়ির দরজা লক করে দেন।
পরবর্তীতে গাড়িটি উত্তরা দিয়াবাড়ি, বেড়িবাঁধ হয়ে সাভারের হেমায়েতপুরের দিকে নেওয়া হয়। পরে আবার দারুস সালামসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দুপুর ১২টার দিকে পরিকল্পনা কমিশনের সামনে এসে থামে গাড়িটি।
মাকসুদা হোসেন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি ঘোরানো হলেও চালক কেন তাকে জিম্মি করেছে বা কেন এভাবে গাড়ি চালাচ্ছে—সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
তিনি আরও জানান, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের মাঠে (সাবেক বাণিজ্য মেলার স্থান) গাড়ি থামিয়ে চালক তার মায়ের চিকিৎসার কথা বলে ছয় লাখ টাকা দাবি করেন এবং তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা চান। তিনি তখন বলেন, তার কাছে ওই মুহূর্তে টাকা নেই, অফিসে গেলে দেওয়া হবে। এরপর চালক তাকে পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরে নিয়ে আসেন, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করে।
একজন যুগ্ম সচিবকে জিম্মি করার খবরে সকাল থেকেই প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গাড়িটি ট্র্যাক করছিল বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শাকিল আখতার জানান, অভিযুক্ত চালক মাদকাসক্ত বলে প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন। তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মাকসুদা হোসেন বলেন, “চালকের যদি অর্থের প্রয়োজন হতো, সে চাইতে পারত।
আমাকে জিম্মি করে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে চার ঘণ্টা ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ঘোরানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।
এসআর
মন্তব্য করুন: