[email protected] রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
১৩ পৌষ ১৪৩২

মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ নানা আলামত উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ৭:৫৭ পিএম

সংগৃহীত ছবি

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় এ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল ধসে পড়ে এবং নারী ও শিশুসহ চারজন আহত হন।
পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে ককটেল, দাহ্য ও রাসায়নিক দ্রব্যসহ বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করে।
সিআইডির দেওয়া প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে—গোলাকৃতির কথিত বোমা, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাইপ বোমা, শর্টগানের সীসার গুলি, সাদা রঙের পাউডার (বোমা তৈরির সম্ভাব্য কাঁচামাল), কেমিক্যাল কনটেইনার, বৈদ্যুতিক ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, টাকা গণনার মেশিন, একটি ফোল্ডিং চাকু, হ্যান্ডকাপ, স্পাই ক্যামেরা, বিভিন্ন ধর্মীয় বই, গ্লিসারিন, পুলিশের বেল্ট, ওয়্যারলেস সেটের চার্জার এবং রিমোট কন্ট্রোল চাবির রিংসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
উদ্ধারকৃত ককটেলগুলো পরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঝিলমিল এলাকার একটি ফাঁকা স্থানে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট নিরাপদভাবে নিষ্ক্রিয় করে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, ঘটনাস্থলে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে। এখনো অভিযান চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জাকির হোসেন জানান, বিস্ফোরণের সময় বিকট শব্দের সঙ্গে একটি ইটের মতো বস্তু তার মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং তার মাথা ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভবনের মালিক পারভিন বেগম জানান, ২০২২ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরে মুফতি হারুন নামে এক ব্যক্তি মাদ্রাসা পরিচালনার উদ্দেশ্যে ভবনটি ভাড়া নেন। প্রায় তিন বছর ধরে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছিল। আলামিন ও তার স্ত্রী আছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি হারুন মাঝে মধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন বলে তিনি জানান।
বিস্ফোরণে মাদ্রাসার আসবাবপত্র, জানালার কাঁচ ভেঙে যায় এবং ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে। আশপাশের এলাকায় দেয়ালের ভাঙা অংশ ও কাঁচ ছড়িয়ে পড়ে। পাশের মোহাম্মদ হোসেনের মালিকানাধীন ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন মাদ্রাসাশিক্ষক আলামিনের দুই ছেলে উমায়েদ (১০) ও আবদুল্লাহ (৮), মেয়ে রাবেয়া (৬) এবং পাশের একটি সিএনজি গ্যারেজের শ্রমিক জাকির হোসেন (৪৫)।
পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিস্ফোরণের ধরন ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর